নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ

দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে না পেরে যশোরের মণিরাপুরের রাজপথ কাঁপানো উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুর রবের দু’টি পা কর্তন করতে হয়েছে। বর্তমানে পা বিহীন অবস্থায় উপজেলা সদরে একটি বেসরকারী কিনিকে অসহায়ের মতো দিনাতিপাত করছেন আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। বেঁচে থাকার আকুতি ও সু-চিকিৎসায় জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জানাযায়, উপজেলার ভোজগাতী ইউনিয়নের কর্ন্দপপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার গাজীর ৪ পুত্রের মধ্যে তৃতীয় আব্দুর রব। ২০১৭ সালে নিজ কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে তার ডান পায়ে সামান্য ফোঁসকা পড়ে। সাধারণ ফোঁসকা মনে করে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সাধারণ চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাতে আশানুরূপ ফল হয়নি। ধীরে-ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করে পায়ের ফোসকা পড়া জায়গা। সেখান থেকে ঘাঁ এবং পরে পঁচন। তার শরীরে ডায়াবেটিক থাকায় পঁচন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে পায়ের উপরের দিকে। এরই মধ্যে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তিনি। কিন্তু শত চেষ্টার পরও তার পা বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি চিকিৎসক। এরপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরানাপন্ন হলে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে অস্ত্রোপাচার করে পঁচন রোধ করতে ডান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে বাধ্য হন। কিন্তু পঁচন রোধ করা সম্ভব না হওয়ায় পর্যায়ক্রমে হাটু এবং শেষ পর্যন্ত কোমরের ঠিক নীচ থেকে তার ডান পা সম্পূর্ণ বিছিন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে নিজের সহায় সম্বল বিক্রিসহ আত্মীয়-স্বজদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাবে এক সময় যথাযথ চিকিৎসা সমাপ্ত না করে বাড়ীতে ফিরে আসে। এলাকার কিছু হিতাকাঙ্খিদের সহযোগিতায় স্থানীয় বেগারীতলা (টুনিয়াঘরা) বাজারে ছোট একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। এক পায়ে ভর দিয়ে কোন রকম বাড়ী থেকে দোকান এ ভাবে চলছিল তার ব্যবসা এবং সংসার। কিন্তু বিধিবাম, সে সুখ টুকু সইলো না তার কাপালে। চলতি বছরের শুরুর দিকে অপর (বাম) পা’টিও একই রোগে আক্রান্ত হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করিয়েও কোন ফলপ্রসু ফলাফল পাওয়া যায়নি। এদিকে পায়ে অবস্থা দিন-দিন আরও খারাপের দিকে চলে যায়। এবার স্মরনাপন্ন হন আদদ্বীন মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলামের কাছে। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার ব্যাক্তি মালিকানাধীন মণিরামপুর পৌরশহরে রোকেয়া কিনিকে গত ২ অক্টোম্বর ২০২১ইং তারিখে তার বাম পা’টিও সফল অপারেশন করে কেটে শরীর থেকে বাদ দেয়া দিয়েছেন। বর্তমানে দু’পা বিহীন আব্দুর রব রোকেয়া কিনিকে বেডে শুয়ে পায়ের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন আর মৃত্যুও প্রহর গুনছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আব্দুর রবের পা মুলত: ডায়াবেটিক ফুট রোগে আক্রান্ত হয়ে ভয়াবহ পঁচন ধরেছিল। যে কারণে তার জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোন চিকিৎসা ছিল না।’
নব্বই দশকের উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগনেতা অ্যাড. বশির আহমেদ খান (এপিপি) জানান, আব্দুর রব ১৯৯৪ সালে মণিরামপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকসহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা ছিলেন। এরশাদ পতন আন্দোলন, খালেদা জিয়ার শাসনামলে আওয়ামীলীগের সকল কর্মসূচীর অগ্রভাগে থাকতেন। শতবাধা বিপত্তি আসলেও কখনো দল তথা নৌকার সাথে বেইমানী করেননি এই নেতা।
তৎকালিন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক বর্তমান জেলা যুবলীগনেতা প্রবীর কুন্ডু জানান, ‘আব্দুর রব দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন। কিন্তু অদ্যবধি তিনি রাজনীতি থেকে এতটুকু সুবিধা গ্রহণ করেছেন এমন কোন নজির নেই। বরাবরই রব ছিল আওয়ামী নীতি আদর্শে বিশ্বাসী। একজন আদর্শ মৃজিব সৈনিক।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগনেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুর রবের বাবার উপজেলার ব্যাগারীতলা বাজারে একটি মুদি দোকান ছিল। লেখাপাড়া আর রাজনীতির পাশাপাশি ওই দোকানে বাবাকে সহযোগিতা করতেন। কিন্তু এক সময়ে আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের অত্যাচারে সে দোকানটিও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তার বাবা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে তিনি নিজের জন্য না করে বন্ধুদের চাকুরীর সুপারিশ নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন নেতাদের দ্বারে-দ্বারে। অনেকের চাকুরী তার সুপারিশে হয়েছে-এমনটি বেশ কয়েকজন স্বীকারও করেছেন। তার নিজের জন্য চাকুরীর চেষ্টা না করে পরের জন্য এত ছোটাছুটির কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হলে-একই জবাব পাওয়া যেত-আমি আজ না হয় কাল চাকুরী একটা পেয়ে যাবো কিন্তু এদেরতো সুযোগ কম। যদি আমার সুপারিশে তাদের চাকুরী হয় সেটাই বড় কথা। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি জোট মতায় আসলে তার ভাগ্যে নেমে আসে দুর্ভাগ্যের মহাখড়ক। জামায়াত-বিএনপি’র অত্যাচারে প্রায় পুরো পাঁচটি বছর পলাতক জীবন যাপন করতে হয়। ২০০৫ সালের শেষের দিকে এক বন্ধুর সহযোগিতায় যাত্রীবাহি ঢাকাগামী পরিবহনের সুপার ভাইজারের কাজ পেয়ে যায়। সকল লাজ-লজ্জা দুরে ঠেলে দিয়ে কাজে নেমে পড়েন সে। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে কাজেই নিযোজিত ছিল। কিন্তু বিধাতার সেটাও সহ্য হলো না। সামান্য ফোঁসকা থেকে সৃষ্টি পঁচন রোগে তার দু’টি পা শরীর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। কি হয় সেটাও এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তার আশু রোগমুক্তি ও অপারেশন পরবর্তী সু-চিকিৎসায় মামনীয় প্রধানমন্ত্রী, রাাজনৈতিকদলের সহকর্মীসহ সমাজে বিত্তবানদের সহযোগিতার কামনা করেছেন। কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাইলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের (বিকাশ) -০১৯১২৯৭৯১১৮ নম্বরে যোগাযোগ করার আকুতি জানিয়েছেন তিনি।